প্রকাশিত: ১১/০৯/২০১৮ ৭:৩৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিলে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৪১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর পরিচালক মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ অর্থ সংরক্ষণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে সাধারণত তিন কিস্তির তহবিল নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয় না।খবর রাইজিং বিডির

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শেষ কিস্তির অর্থ ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আকস্মিক কোনো কারণে ভাসানচরের উন্নয়নের জন্য এ অর্থ লাগতে পারে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এরা কবে নাগাদ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ফেরত যেতে পারবে তা এখনো অনিশ্চত। ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত এ দেশে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার উপযোগী একটি নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রয়োজন হবে দেশী-বিদেশী অর্থায়ন ও লজিস্টিক সহায়তা। এসব সহায়তা পাওয়ার জন্যই রোহিঙ্গা ইস্যুকে সরকারের অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় স্থান দেওয়া হচ্ছে।

১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করতে ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসন গড়ে তোলার জন্য গত বছর একনেক বৈঠকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভাসানচর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ভাসানচর ভাঙন প্রতিরোধসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে নৌবাহিনী রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলবে। সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম, ১ হাজার ৪৪০ ব্যারাক হাউস ও ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ নৌবাহিনীর ব্যারাক নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া, আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মাদ্রাসাসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি সাইক্লোন শেল্টার স্টেশন ও দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গত এপিল মাসে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর কাজ সমন্বয় করতে ‘যৌথ কনসালটেটিভ ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে । এ গ্রুপের সদস্য হিসেবে আছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা-ইউএনআরসি। ইউএনআরসি সদস্যদের ভাসানচর পরিদর্শনের কথা রয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে আগ্রহী করে তুলতে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা বেশ জটিল কাজ। এজন্য কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করা হয়। এছাড়া, স্থানান্তর কাজে পাশে থাকার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ১১টি সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে ৪ ও ১২ এপ্রিল বাংলাদশে কর্মরত জাতিসংঘের সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদে ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের অগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত